যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংস খাওয়া বরাবরই একটি জনপ্রিয় অভ্যাস, বিশেষ করে বারবিকিউ মৌসুমে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। গরুর মাংসের দাম এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ইতিমধ্যেই রেকর্ড গড়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই মূল্যবৃদ্ধি কিছু সময়ের জন্য নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে একাধিক গভীর কারণ।
রেকর্ড দামের চিত্র
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী,
এক পাউন্ড গরুর মাংসের কিমা এখন গড়ে ৬.১২ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২% বেশি।
অন্যদিকে রান্না না করা গরুর বড় টুকরো বা বিফ স্টেকের গড় দাম ১১.৪৯ ডলার, যেখানে বৃদ্ধির হার ৮%।
মূল কারণগুলো কী?
জলবায়ু পরিবর্তন ও খরা:
পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় ঘাস ও খাদ্য সামগ্রীর উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে খরার কারণে গরুর সংখ্যা কমেছে।
খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি:
গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম বেড়ে গেছে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের জটিলতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে।
শ্রমিক সংকট:
মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোতে কর্মীর ঘাটতি এখনও কাটেনি। কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকেই এ শিল্পে স্থায়ী শ্রমিক সংকট চলছে।
পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি:
জ্বালানির দাম এবং ট্রান্সপোর্ট খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাংস পরিবহনও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
ক্রেতাদের ওপর প্রভাব:
গরুর মাংস যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক পরিবারিক খাবারের প্রধান উপাদান। কিন্তু দামের এই ঊর্ধ্বগতি অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের বাজেটকে হুমকির মুখে ফেলছে। অনেকেই এখন বিকল্প প্রোটিন যেমন: রয়েছে মুরগি, টার্কি কিংবা উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের দিকে ঝুঁকছেন।
সম্ভাব্য সমাধান:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
স্থানীয় উৎপাদন উৎসকে উৎসাহিত করা,প্রযুক্তিনির্ভর পশুপালন ব্যবস্থা গড়ে তোলা,
এবং বিকল্প প্রোটিন উৎসে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য টেকসই সমাধান খোঁজা যেতে পারে।
গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সংস্কৃতিতে বড় একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে। এই প্রবণতা কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং পরিবেশ, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক আচার-আচরণের দিক থেকেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।